Sunday, April 24, 2011

কোরান গ্রন্থ নির্ভূল কি? (Holy Quran)

বিশ্বের দেড় বিলিয়ণ শিয়া/ছুন্নী/কাদিয়ানী তথা কনভার্টেড মুছলমানের মধ্যে এমন কে আছে? যে কোরান গ্রন্থের নির্ভূলতা প্রমান করতে সক্ষম??
* জ্ঞানীদের আগেই জানা দরকার যে, কোরান আর কোরান গ্রন্থ এক নয়। প্রেম/প্রেমপত্র, জ্ঞান/জ্ঞানগ্রন্থ ইত্যাদি পরস্পর এক নয় এবং উহার ছোয়াব বা ফলাফল আরো আরো আকাশ-পাতাল পার্থক্য। প্রথমটি আল্লাহ এবং প্রকৃতি সর্বকালেই সংরক্ষণ করেন কিন্তু দ্বিতীয়টি আল্লাহও সংরক্ষণ করতে পারে না, করেনি এবং ওয়াদাও করেনি, সম্ভবপরও নয়।
•* কোন ধর্ম গ্রন্থই স্বয়ং আল্লাহ, প্রকৃতি, ফেরেস্তা এমনকি অধিকাংশ নবিগণও নিজ হাতে লিখেননি; লিখেছেন তাদের তুলনায় সাধারণ মানুষ। আর মানুষ কোনক্রমেই ভুলের উর্দ্ধে নয়! হোক না সে নবি/রাছুল, দেবতা/অবতার! আদম বা ইব্লিস।

কোরান সম্বন্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেসনের স্ব বিরোধী মন্তব্য:
১. আল্লাহর আদেশে রাছুল কোরানের আয়াতের বিন্যাস, রূপ, সংখ্যা নিরুপণ করেন! অত:পর জিব্রাইল কর্তৃক কয়েকবার পরীক্ষা করে নির্ভূল/নিশ্চিত করা হয়! সেই কোরানই বিবি হাফসার মারফত প্রাপ্ত হয়ে হ. উছমান হুবহু নকল করে বিশ্বে প্রচার প্রতিষ্ঠা করেন । (দ্র: সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্ব কোষ, ১ম খ. ৩য় মুদ্রণ, পৃ: ৭০, ৩৩৬)
দ্বিতীয় মন্তব্য:
২. আরবের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্বারীগণ কোরানের আয়াতের সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন: কুফীদের মতে: ৬,২৩৬টি; বসরাবাসীদের মতে: ৬,২১৬টি; সিরীয়াবাসীদের মতে: ৬,২৫০টি; ইসমাইল ইবনে জাফর মদনীর মতে: ৬,২১৪টি; মক্কীদের মতে: ৬,২১৮টি; হযরত আয়শার মতে: ৬,৬৬৬টি আয়াত (দ্র: সং. ই. বিশ্বকোষ, ১ম খ. পৃ: ৭০)। আর আজকের রাশাদ খলিফার মতে ৬২৩৪টি আয়াত।
তৃতীয় মন্তব্য:
৩. তফসিরে বায়দবীতে বলা হয়েছে যে, সুরা বাকারাতে ২৮১ টি আয়াত আছে। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, অধিকাংশের মতে কোরান মজিদের অবতীর্ণ শেষ আয়াতটি সম্বন্ধে হযরত (দ:) বলেন, ‘ইহাকে বাকারার ২৮০তম শেষ আয়াতের পরে সন্নিবেশিত কর।‘ (সং. ই. বিশ্বকোষ, ১ম খ. পৃ: ৭০)।
[অতএব সুরা বাকারার আয়াত সংখ্যা হওয়া উচিৎ মোট ২৮১টি। পক্ষান্তরে সেখানে আছে মোট ২৮৬ টি আয়াত। তদুপরি মহানবির নির্দেশ মত সেই শেষ আয়াতটি সেখানে সন্নিবেশিত করা হয়নি। আর অতিরিক্ত ৫টি আয়াত সুরা বাকারায় কিভাবে ঢুকে পড়লো, কেন পড়লো! এই ঐতিহাসিক প্রশ্নটি আজও গোপন রয়েছে।]
৪. হযরত উবিয়্যার (রা) প্রতিলিপিতে ২টি সুরা অতিরিক্ত ছিল।
৫. ইবনে মাসুউদ (রা) এর প্রতিলিপিতে সুরা নং ১১৩ ও ১১৪ বিদ্বমান ছিল না।
৬. শীয়াদের মতে হযরত আলী (রা) ও তার বংশের (নবি বংশের) শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধীয় আয়াতসমূহ এমনকি সুরা সমূহ কোরান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, যথা : (ক) সুরা আল- নুরায়ন ও (খ) সুরা ওয়ালায়া।
৭.- পূর্বকালে সপ্তকারীর পাঠ ইসলামী সমাজে প্রচলিত ছিল। বর্তমানে ইহাদের দু’জনের পাঠ মাত্র প্রচলিত আছে-। মিশর ব্যতীত আফ্রিকার সর্বত্র নাফি’র পাঠ এবং মিশরে ও পৃথিবীর বাকি অংশে হাফসার পাঠ প্রচলিত।
[দুই কোরানের নমুনা: একটিতে লেখা বিছমিল্লাহির রহমানির রাহিম এবং আলিফ-লাম-মিমের উপর তাসদিদসহ বড় মদ অন্যটিতে ‘বিছমি আল্লাহ আর রহমান আর রাহিম এবং আলিফ-লাম-মিমের উপর তাসদিদ নেই।‘ অনুরূপ পার্থক্যে সমগ্র কোরান লিখা; সহজ সাক্ষি: সাধারণ বাজারের কোরান আর ইসুফ আলির সংকলিত কোরান।]
৮. স্বর চিহ্নসমূহ প্রথমে বর্ণের বিভিন্ন স্থানে নুক্তারূপে লিখিত হইত। অষ্টম শতাব্দির মধ্যভাগে এই ব্যবস্থা পরিবর্তীত করিয়া ‘আলিফ, ওয়াও, এবং য়্যা’ এর অনুকরণে বর্তমানে ব্যবহৃত যবর, পেশ ও যের প্রবর্তিত হয়। কেহ কেহ কোরানের লিপিতে এগুলির ব্যবহার সঙ্গত মনে করেন নাই। (৪ নং থেকে ৮ নং)সং. ই. বিশ্বাকোষ, ১ম খ. পৃ: ৩৩৬-৩৩৮)
[খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের প্রায় ১৪০ থেকে ৩৫০ বছর পরে নোক্তা ও কারক বিভক্তি বা ব্যকরনিক সংযোজন-সংশোধন আল্লাহ-রাছুল, জিব্রাইল তথা খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের জ্ঞানের উপর সাধারণ মানুষের হারামী বেদাতী হস্তক্ষেপ কি?]
৯. ছুরা তওবা ব্যতীত সকল ছুরার প্রারম্ভে লেখা ‘বিছমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহিম’ আয়াতটি অহি নয়।
[সুতরাং আল্লাহ/রাছুলের বিপরীতে ১১৩টি আয়াত অযথা ও অতিরিক্ত সংযোগ করেছে কে? কোন সাহসে?? কেন? সে কি ইব্লিছ নয়??]
১০. নাছেক-মনছুক নামে শরিয়তি-মারেফাতি এবং শিয়া-সুন্নী অসংখ্য তফছিরকারগণ বেশ কিছু আয়াতের উপর লিখিত প্রমানাদিসহ আদিকাল থেকে সন্দেহ পোষণ করে আসছেন।
শিয়াগণ বলেন, তিন শতের উপর কোরানের বাক্য তাহরীফ অর্থাৎ বদল করা হয়েছে যা আহলে বাইতের শানে ছিল। ইহাদের মধ্য থেকে ইমাম নেসাই ১৫০টি স্ব প্রমান করেছেন। সিরাতুন্নবি অর্থাৎ নবির চারিত্রিক গুণরাজি যে সকল বাক্যে উল্লিখিত ছিল তাদের মধ্য থেকে ১১৪টি বাক্য বদল করা হয়েছে। এ সকল বাক্যের অনেকগুলি ইবনে কাসির তার তফসীরে টীকাতে প্রকাশ করেছেন। কি ছিল এবং উহার স্থলে কি আছে তা তিনি প্রমান করেছেন।
১১. ৩: ১৪৪ নং আয়াত: মোহাম্মদ একজন রাছুল ব্যতীত নহেন।-।
এটি কোরানের নয় বলে প্রাচীন তফসীরকারগণ আজো প্রতিবাদ করছেন (দ্র: ১০,১১,১২: তফসীর দুর্বে মনসুর: ২য় খ.পৃ: ১৪০; তফসীর কাশ্শাফ ১ম খ. পৃ: ৩৯০; তফসীর কবির ৩য় খ. পৃ: ২০০ (মিশরীয় প্রকাশনা)। প্রযতেœ: হাদিছ সাহিত্যের ইতিহাস: সাদ উল্লাহ্; পৃ: ১০৮-১১৬)
অতঃপর সর্বজন বিদিত যে:
১২. হেরা পর্বতের গুহায় অবতীর্ণ সর্বজন স্বীকৃত সর্বপ্রথম আয়াত-ইকরা বিসমে-, কোরানে স্থান পেয়েছে শেষের দিকে ৯৬ নং ছুরা আলাকে।
১৩. সর্বজন স্বীকৃত শেষ অবতীর্ণ আয়াত- আল- ইয়াওমা আকমালতু-, কোরানের এই শেষ আয়াতটি স্থান পেয়েছে কোরানের প্রথম অংশের ৫নং ছুরা মায়েদার ৩ নং আয়াতের শেষের দিকে।
১৪. ছুরা ফাতেহা ৫ম সুরা বলে কথিত আছে; অথচ তা বসানো হয়েছে সর্বপ্রথম।
১৫. মক্কা-মদিনার অবতীর্ণ ছুরাগুলি সময়কালের হিসাব মতে ক্রম বিন্যাসিত অবস্থায় নেই। অর্থাৎ মাদানী ছুরাগুলি কোরানের প্রথম অংশে ও মক্বী ছুরাগুলি কোরানের শেষ অংশে স্থান পেয়েছে। অধিকাংশ মক্কী ছুরার মধ্যে দুএকটি বিচ্ছিন্ন মাদানী আয়াত, অনুরূপ মাদানী ছুরার মধ্যেও দুএকটি বিচ্ছিন্ন মক্বী আয়াত সন্নিবেশিত করা আছে। (দ্র: সমালোচনা, মু. পিকথল অনুদিত কোরান)
[এক্ষণে ইসলামিক ফাউন্ডেসনের বিশ্বকোষের প্রায় ২০জন শ্রেষ্ঠ আলেম, মুফতি, হাফেজ, স্কলারদের সম্মিলীত বিবরণ/মতামত কি বিভ্রান্তকর! হতাসাজনক নয়?]
১৬. (অনুবাদ প্রসঙ্গে) অনেক সুরা আছে, যা অ অর্থাৎ এবং শব্দ দিয়ে শুরু করা হয়েছে। প্রায় সমগ্র কোরানেই অ এর অর্থ এবং সুতরাং, অতএব, অথবা ইত্যাদি করা হয়েছে কিন্তু কোরানের শেষের দিকের বেশ কিছু ছুরায় অ এর অর্থ করা হয়েছে শপথ বা কসম, যদিও প্রকৃত শপথ অর্থে কসম শব্দটি কোরানে অন্যত্র উল্লেখ আছে। স্বয়ং আল্লাহর যদি কোন কিছুর শপথ বা দোহাই দিয়ে অহি নাজিল করতে হয় ! তবে তা আল্লাহর জন্য বড়ই অপমানজনক বটে! কারণ কসম করা হয় তুলনায় নিজের উর্দ্ধের ও অধিক বিশ্বস্থ একটা কিছুর। তাছাড়া:
স্বয়ং আল্লাহ নিজেই কোরানে ঘোষনা করে যে, যারা কথায় কথায় কসম করে তাদের বিশ্বাস করিও না। (৬৮: ১০) সুতরাং আল্লার স্বয়ং ঘন ঘন কসম করার সুযোগ নেই বা স্ব বিরোধী অহি করায়ো অসম্ভব। কয়েকটি উদাহরণ:
বৈকালের শপথ। খ) ছুটন্ত ঘোড়ার শপথ। গ) তীন ফলের শপথ, জাইতুনের (জলপাই) শপথ, সিনাই পর্বতের শপথ। ঘ) নিরাপদ নগরীর শপথ। ঙ) পূর্বাহ্নের শপথ ইত্যাদি। ( দ্র: কোরানের শেষাংশের কতিপয় ছুরা)
১৭. কোরান এর নামকরণ: আল কোরান, কোরান শরিফ, আল কোরানুল করিম, পবিত্র কোরান, মারেফুল কোরান, তাহফিমুল কোরান, ফি-যীলালীল কোরান ইত্যাদি স্ব স্ব মতের সংযোজিত শিরোনামগুলি অনধিকার, অহেতুক বা বিভ্রান্তমূলক বেদাতী সংযোজন বলা যায়। কারণ চির পরিচিত শিরোনাম/মোড়ক বদলের দু:সাহস যারা করেছে! তাদের পক্ষে ভিতরের জিনিষ বদল করা আরো সহজ।
১৮. ছুরা নিছার ১১, ১২ ও ১৭৬ নং আয়াতে সম্পত্তি বন্টনের বিধানগুলি অসম্পূর্ণ বা ভুল!
প্রমান: অবস্থাভেদে অংশীদারদের অংশগুলি যোগ করলে কথনও মূল সম্পত্তি ছাড়িয়ে যায় আবার কখনও এমন কি অর্ধেক সম্পত্তিও অবশিষ্ট থেকে যায়।
আল্লাহ/রাছুল বা কোরানের এই ঐতিহাসিক ভুল সাধারণ/ফালতু/লোকে সংশোধন করত ‘আল ফারাইদ’ নামক আর এক গোজামিল আইন ছুন্নী সমাজে বলবৎ আছে!

বর্তমান কোরান সংযোজিত কি সংকোচিত তা সন্দেহাতীত সাক্ষি-প্রমানের জন্য প্রয়োজন একজন রাছুল/নবির। অতীতের সকল ঐশী গ্রন্থই প্রকৃতির নিয়মেই রদ-বদল হয়েছে এবং তার সঠিক মীমাংশার জন্য পরম্পরায় প্রকৃতির নিয়মেই এক/একাধিক রাছুল/নবির আগমণ হয়েছে। অর্থাৎ সকল রাছুল-নবিগণই তার পূর্ববর্তি নবির/কেতাবের সত্যতার সাক্ষি দিয়ে ব্রম্মা-অব্রম-ইব্রাহিমের গ্রন্থেরই সংস্করণ, সংরক্ষণ ও ব্যাখ্যা করেছেন মাত্র; মোহাম্মদও অনুরূপ করেছেন।
অতএব কোরানের জন্যও এমন একজন সাক্ষি আসা অযৌক্তিক বা হারাম নয়! কিন্তু শরিয়ত কিছুতেই রাজি নয়! আর তাই সমস্যা সমাধানের আর দ্বিতীয় কোন পথও খোলা নেই।
১৯. ১৪শ বছরের কোরান লক্ষ-কোটি-কোটিবার সংকলন করার পরেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৮ম বারেও আনকাবুত ছুরার আয়াত সংখ্যা ৬৯ এর স্থলে ছাপা আছে ৬৭; ছুরা যুমার এর ২৩ নং আয়াতে ‘মাশানিয়া’র স্থলে ‘মানানিয়া’ আরবি শব্দটি পর্যন্ত ভুল ছাপা আছে; অতএব ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে এর চেয়েও গুরুতর ভুল থাকা একান্তই স্বাভাবিক!
[এক্ষণে তাতে অত্যাশ্চর্য হওয়ারও সুযোগ নেই! আর তাই বলে কোরান গ্রন্থকে অবহেলা বা প্রত্যাখ্যান করারো কোন হেতু নেই।]
২০. প্রকাশ থাকে যে:
* উল্লিখিত মতামত, মতান্তরগুলি হিন্দু, খৃষ্টান, নাস্তিক বা ম জ বাসারেরও ষড়যন্ত্র নয়! বরং স্ব জাতিয় জবরদস্ত, শ্রেষ্ঠ মাওলাহুম (তাদের আল্লাহ/প্রভু), ইমাম-আল্লামাদের!
* এতদসত্বেও আরবি কোরান অটুট থাকলেও উহার অনুবাদ/তফছিরে মতান্তরের উর্দ্ধে নির্ভূল অনুবাদ করার সিল্‌ (খতম) মারা উপযুক্ত লোক না পাঠিয়ে এযাবত অনারব মুছলিমদের উপর আল্লাহ অবিচার করলো? না অনারবদের কোরানের মূল দর্শন বুঝতেই দেয়নি??

তাই আজো:
ক. মাত্র উচ্চারণেই বর্ণ প্রতি ১০টি ছোয়াবের লোভ দেখিয়ে কোরানকে শুধুমাত্র পড়ার জন্যই রাখা হয়েছে?
খ. মানার জন্য দিয়েছে ১টি মাত্র আয়াত: মরার আগে ১বার মাত্র কলেমা পড়লেই একমাত্র শিরকী পাপ ব্যতীত সারা জীবনের (এমনকি আপন মা-বোন জেনা, খুন, সুদ-ঘুষ, মদ-মাগীসহ) শতভাগ পাপ ক্ষমা হয়ে ইরানী বেহেস্তবাসী হয়োয়ার বিভ্রান্তকর প্রলোভণ!
গ. তারপরো দরকার হলে আছে (২ নম্বরী অহি) লক্ষ লক্ষ হাদিছ!
ঘ. তাতেও অবৈধ স্বার্থ/খায়েশ পুরণ না হলে দৌড়াও নিকটস্থ মসজিদের নামাজ বেচা হারাম খাওয়া ( দ্র: ২: ১৭৪) মুফতি/ইমামদের ফতোয়ার জন্য!!
বিনীত।

1 comment: